বিহার (মঠ)
বিহার বা মঠ হল এমন একটি ভবন বা ভবনসমষ্টি যেখানে সন্ন্যাসী বা সন্ন্যাসিনীরা একত্রে বা একাকী বসবাস করেন। সাধারণত মঠের অভ্যন্তরে প্রার্থনার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান থাকে যা একটি উপাসনালয়, গির্জা বা মন্দিরের আকার নিতে পারে। একটি সরল ভবন, যেখানে একজন জ্যেষ্ঠ সন্ন্যাসী/সন্ন্যাসিনী এবং দুই বা তিনজন কনিষ্ঠ সন্ন্যাসী থাকেন, থেকে শুরু করে বিশাল পরিসরে শত শত সন্ন্যাসীর বাসভবন - সব রকমের মঠ পরিদৃষ্ট হয়। একটি আদর্শ মঠে একটি গির্জা, শয়নকক্ষ, মঠের অভ্যন্তরীণ চত্বর, ভোজনকক্ষ, গ্রন্থাগার, স্নানাগার এবং চিকিৎসালয় থাকে। এছাড়া এর আশেপাশে চাষাবাদের জমিও থাকতে পারে। অবস্থান, ধর্মীয় নিয়ম এবং বাসিন্দাদের ধরনের উপর ভিত্তি করে কুটিরশিল্প এবং সম্প্রদায়কে সেবা প্রদানের জন্য আরও অন্যান্য ধরনের ভবন মঠের অংশ হিসেবে থাকতে পারে। যেমন- অতিথিশালা, বিদ্যালয়, কৃষি সংক্রান্ত ভবন, যেমন গোশালা বা লোহার কাজের কর্মশালা ইত্যাদি।
ইংরেজি ভাষায় সাধারণত "monastery" শব্দটি পুরুষ সন্ন্যাসীদের বসবাসের জায়গাকে বোঝায়। আর বর্তমানে "convent" শব্দটি মূলত নারী সন্ন্যাসিনীদের (nun) জন্য, বিশেষত যারা শিক্ষাদান বা সেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত তাদের বসবাসস্থলের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ঐতিহাসিকভাবে, ফ্রায়ারদের (এক ধরনের খ্রিস্টান সন্ন্যাসী) বাসস্থলকে convent বলা হতো, যাকে বর্তমানে friary বলা হয়। বিভিন্ন ধর্মে এই শব্দগুলোর আরও নির্দিষ্ট ব্যবহার থাকতে পারে।
শব্দতত্ত্ব
[সম্পাদনা]'Monastery' (বিহার) শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ μοναστήριον থেকে, যা আবার μοναστήριος – monasterios থেকে নিষ্ক্রান্ত। এই শব্দের মূল অর্থ "একা থাকা"। গ্রিক শব্দ μόνος – monos অর্থ "এক/একা" এবং μονάζειν – monazein অর্থ "একা থাকা"। শব্দের শেষাংশ "-terion" যোগ করা হয় কোন কিছু করার স্থান বোঝাতে। 'monastērion' শব্দটির সবচেয়ে প্রাচীন ব্যবহার পাওয়া যায় ১ম শতাব্দীর ইহুদি দার্শনিক ফিলোর On The Contemplative Life, ch. III রচনায়।[১]
ইংল্যান্ডে 'monastery' শব্দটি দিয়ে ধর্মপ্রধানের বাসস্থান এবং ক্যাথেড্রালের ধর্মযাজকদের জন্য নির্ধারিত আবাসকেও বোঝাতো। ধর্মযাজকেরা সাধারণ মানুষ থেকে আলাদাভাবে বসবাস করতেন। অধিকাংশ ক্যাথেড্রাল আসলে বিহার ছিল না, এবং সেগুলোর কাজকর্ম 'ক্যানন সেকুলার' এর অধীনে পরিচালিত হতো। ক্যানন সেকুলার সম্প্রদায়গত পরিচালনা পদ্ধতি হলেও সন্ন্যাসীরা যেভাবে বসবাস করে, ক্যানন সেকুলার তেমন ছিল না। যাই হোক, কিছু কিছু ক্যাথেড্রাল যেমন- ইয়র্ক মিনস্টার, বিহারের নিয়মের অধীনে চলত। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে কিছু সময়ের জন্য ক্যাথেড্রাল ছিল এবং সংস্কার আন্দোলনের পূর্ব পর্যন্ত একটি বেনেডিক্টাইন বিহার হিসেবে পরিচিত ছিল। এদের কার্যাবলি বেনেডিক্টাইন ঐতিহ্যকে ধারণ করে। ক্যাথেড্রাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে 'Cathedral' শব্দের ভুক্তিটি দেখুন। ক্যাথেড্রালগুলোকে 'কলেজিয়েট চার্চ' (যেমন- সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল, উইন্ডসর) থেকে আলাদা করতে হবে।
পারিভাষিক শব্দাবলী
[সম্পাদনা]'মনাস্ট্রি' (monastery) শব্দটি দ্বারা বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ধর্মসাধনার স্থানকে বোঝানো হয়। রোমান ক্যাথলিক এবং বৌদ্ধধর্মের কিছু শাখায় এই শব্দটির, এবং এর সাথে সম্পর্কিত আরও কিছু শব্দের, একটু নির্দিষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে।
বৌদ্ধধর্মে মনাস্ট্রিকে সাধারণত বিহার বলা হয়। বিহারে পুরুষ বা মহিলা উভয় ধর্মসাধকই থাকতে পারেন। একটি মহিলা-অধ্যুষিত বিহারকে ইংরেজিতে প্রায়ই 'নানারি' বা 'কনভেন্ট' বলা হয়। তবে, বিহার বলতে একটি মন্দিরকেও বোঝাতে পারে। তিব্বতি বৌদ্ধধর্মে, মনাস্ট্রিকে প্রায়শই 'গোম্পা' বলা হয়। কম্বোডিয়া, লাওস এবং থাইল্যান্ডে একটি মনাস্ট্রিকে 'ওয়াট' বলা হয়। বার্মায় (মায়ানমার) একটি মনাস্ট্রিকে 'কিয়াং' বলা হয়।
একটি খ্রিস্টান মনাস্ট্রি একটি 'অ্যাবে' (abbey - অ্যাবটের শাসনাধীন) বা একটি 'প্রায়রি' (priory - প্রায়রের শাসনাধীন ), অথবা একটি 'হারমিটেজ' (hermitage - একজন হারমিট বা বনবাসী ধর্মসাধকের বাসস্থান) হতে পারে। এটি পুরুষ (মংক) বা মহিলাদের (নান) একটি সম্প্রদায় হতে পারে। কার্থুসিয়ান অর্ডারের অন্তর্ভুক্ত যেকোনো মনাস্ট্রিকে 'চার্টারহাউজ' বলা হয়। পূর্বাঞ্চলীয় খ্রিস্টান ধর্মে, একটি খুব ছোট মনাস্ট্রি সম্প্রদায়কে 'স্কেট' বলা যেতে পারে, এবং একটি খুব বড় বা গুরুত্বপূর্ণ মনাস্ট্রিকে 'লাভরা' মর্যাদা দেওয়া যেতে পারে।
একটি খ্রিস্টান মনাস্ট্রিতে বসবাসরত ধর্মসাধকদের মহৎ সাম্প্রদায়িক জীবনকে বলা হয় ‘সিনোবাইটিক’, এর বিপরীতে রয়েছে 'অ্যাংকোরেটিক' (একাকী বনবাসী ধর্মসাধকের জীবন) কিংবা 'এরেমিটিক' (নির্জনবাসী সাধকের জীবন)। গ্রীস এবং সাইপ্রাসে প্রধানত উসমানলিদের দখলদারিত্বের সময়, এক ধরণের 'ইডিওরিদমিক' জীবনধারাও প্রচলিত ছিল যেখানে মংকরা একসাথে থাকত কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার ছিল এবং সাধারণ কল্যাণের জন্য কাজ করার বাধ্যবাধকতা ছিল না।
হিন্দু ধর্মে মনাস্ট্রিকে মঠ, মন্দির, কৈল, বা সবচেয়ে সাধারণভাবে আশ্রম বলা হয়।
জৈন ধর্মে বৌদ্ধ শব্দ 'বিহার' ব্যবহার করা হয়।
সন্ন্যাস জীবন
[সম্পাদনা]বেশিরভাগ ধর্মেই, সন্ন্যাসীদের জীবন কঠোর নিয়মের দ্বারা পরিচালিত হয়। এই নিয়মগুলি আবাসের বাসিন্দাদের লিঙ্গ নির্ধারণ করে, ব্রহ্মচর্যের পালন ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি কম বা একেবারেই না রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। একটি নির্দিষ্ট সন্ন্যাস আশ্রমের জীবন আশেপাশের জনগণ থেকে কতটা পৃথক থাকে তাও অনেকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু ধর্মীয় ঐতিহ্য সাধারণ জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধ্যানের জন্য নির্জনতা বেছে নিতে উৎসাহিত করে। সেক্ষেত্রে, সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের সদস্যরা একে অপরের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে বেশিরভাগ সময় কাটাতে পারেন। আবার, অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে শিক্ষা, চিকিৎসা বা ধর্মপ্রচারের মতো সেবা প্রদানের উপর জোর দেয়। এছাড়া, ঐতিহ্য এবং আঞ্চলিক আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে কিছু সন্ন্যাস আশ্রম মৌসুমীভাবে ব্যবহৃত হয়। একজন সন্ন্যাসী কয়েকদিন থেকে শুরু করে প্রায় সারাজীবন অবধি সন্ন্যাস জীবনযাপন করতে পারেন।
সন্ন্যাস আশ্রমের দেয়ালের ভিতরে জীবনকে বিভিন্নভাবে সমর্থন করা যেতে পারে: যেমন, পণ্য তৈরি এবং বিক্রয় (প্রায়শই কৃষিজাত পণ্য), অনুদান বা ভিক্ষায়, ভাড়া বা বিনিয়োগের আয়ের মাধ্যমে, বা ধর্মের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তহবিল দিয়ে। ঐতিহাসিকভাবে, সন্ন্যাস আশ্রমগুলোই এসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল। খ্রিস্টান সন্ন্যাস আশ্রমে অতিথি সেবা, দাতব্য এবং হাসপাতাল পরিচালনার একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। সন্ন্যাস আশ্রমগুলি প্রায়শই শিক্ষার ব্যবস্থা এবং বৃত্তি ও গবেষণাকে উৎসাহিত করার সাথে যুক্ত,[২] যার ফলে বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আধুনিক হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন চালানোর মাধ্যমে সন্ন্যাস জীবনধারা আরও আধুনিক সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এছাড়াও কম্পিউটার সেবা, অ্যাকাউন্টিং এবং ব্যবস্থাপনা সেবাও এখন আশ্রম থেকে দেওয়া হয়।[৩]
বৌদ্ধধর্ম
[সম্পাদনা]বৌদ্ধ বিহারগুলো, পালি ও সংস্কৃতে যাদের 'বিহার' বলে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর দিকে 'বর্ষা' থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার বর্ষাকালে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পালন করার একটি রীতির নামই 'বর্ষা'। ঘুরে বেড়ানো ভিক্ষু-ভিক্ষুণীদের নতুন চারাগাছের ক্ষতি করা বা খারাপ আবহাওয়ায় আটকে পড়া থেকে বিরত রাখতে, তাদেরকে সাধারণত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে প্রায় তিন মাস ধরে নির্দিষ্ট জায়গায় থাকার নির্দেশ ছিল।
ধনী সমর্থকরা সাংঘকে যে সম্পত্তি ও পার্কগুলো দান করেছিলেন, প্রাথমিকভাবে ঐসব স্থানে 'বর্ষা' রীতিটি অনুষ্ঠিত হতো। বছর যত যেতে থাকে, 'বর্ষা' চলাকালীন সাংঘের সম্পত্তিতে থাকার এই প্রথাটি কোনোবিটিক মঠবাদে বিবর্তিত হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায় ভিক্ষু-ভিক্ষুণীরা সারা বছর ধরেই বৌদ্ধবিহারগুলোতে বসবাস করতে শুরু করেন।
ভারতে, বৌদ্ধ বিহারগুলি ধীরে ধীরে শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হতে লাগলো যেখানে দার্শনিক মতাদর্শগুলি আলোচিত এবং বিকশিত হতো। বজ্রযান বৌদ্ধদের মঠীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এবং সারা বৌদ্ধ বিশ্ব জুড়ে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এই ঐতিহ্য এখনো ব্যাপকভাবে চর্চিত হচ্ছে। বর্তমানে বিহারের পরিবেশে বসবাস করা বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং ভিক্ষুণীদের সবচেয়ে সাধারণ জীবনযাত্রার পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে।
প্রাথমিক আশ্রমগুলিকে গোটা সাংঘের সম্পত্তি বলে মনে করা হতো। কিন্তু পরবর্তী কালে, এই ঐতিহ্য অনেক দেশেই রূপান্তরিত হয়েছে। সম্পদ রাখার ক্ষেত্রে বিনয়ের নিষেধাজ্ঞাতেও, মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান ইউরোপের অনেক আশ্রমের মতোই, অনেক বৌদ্ধ বিহারই বড় বড় জমিদারে পরিণত হয়েছে। চীনা বৌদ্ধ ধর্মে কৃষক পরিবারগুলো মঠের ভিক্ষুদের তাদের বাৎসরিক ফসলের একটা অংশ দেওয়ার বিনিময়ে বিহারের মালিকানাধীন জমিতে কাজ করতো। এটা এমনভাবে কাজ করত যেমনভাবে কৃষকরা তাদের জমিদারদের ফসল বুঝিয়ে দিত। শ্রীলঙ্কা ও তিব্বতি বৌদ্ধধর্মে একটি বিহারের মালিকানা প্রায়শই একজন ভিক্ষুর মধ্যেই নিহিত হয়ে যেতো। তিনি তাঁর পদটি ভিক্ষু হিসেবে নিযুক্ত ভাইপোর কাছে হস্তান্তর করে সম্পত্তিটিকে পরিবারের মাঝেই রাখতেন। জাপানে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বিয়ে করার অনুমতি দেয়ায়, মন্দির বা আশ্রমের প্রধানের পদটি অনেক প্রজন্ম ধরে বাবা থেকে ছেলের কাছে হস্তান্তরিত হতে থাকে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও শ্রীলঙ্কার থেরবাদ ঐতিহ্যে বনবিহারগুলো বেশি দেখা যায়। বিনয় বা অনুষ্ঠানপালনের চেয়ে বৌদ্ধ ধ্যানের চর্চা ও সাধনার জন্যই এগুলো প্রতিষ্ঠিত। বনবিহারগুলো প্রায়শই প্রাথমিক খ্রিস্টান মঠগুলোর মতোই কাজ করে যেখানে ছোট ছোট ভিক্ষুদের দল মূলত একজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ শিক্ষককে কেন্দ্র করে সন্ন্যাসীর মতো জীবন কাটায়। বনবিহারে ভ্রমণশীল জীবনযাপনই বুদ্ধ ও তার শিষ্যদের আদর্শ হলেও থাইল্যান্ড, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা এবং অন্যান্য দেশের বনবিহার ঐতিহ্যের ভিক্ষুরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন। তবে দিন দিন হ্রাসমান বনাঞ্চল, দাতাদের সহজলভ্যতার অভাব, বিপজ্জনক বন্যপ্রাণী, এবং সীমান্ত সংঘাত ইত্যাদি সমস্যা বনবিহার পদ্ধতির 'ধ্যানী' ভিক্ষুদের বাধ্য করে ঘুরে বেড়ানো ছেড়ে বিহারগুলোতে থাকতে।
তিব্বতি বৌদ্ধ আশ্রম বা 'গোম্পা' কে কখনো 'লামাসারি' নামে জানা যায় এবং তাদের ভিক্ষুদের ভুল করে 'লামা' বলা হয়। হেলেনা ব্লাভাটস্কির থিওসফিক্যাল সোসাইটি তাদের নিউ ইয়র্ক সিটির প্রাথমিক সভাস্থলের নাম রেখেছিল 'দ্য লামাসারি'।
বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহারসমূহ:
- দংলিন মন্দির, চীনের জিয়াংজি
- জেতবন, ভারতের শ্রাবস্তী
- নালন্দা, ভারত
- শাওলিন মন্দির, চীন
- তেংবোচে, নেপাল
অন্যান্য বৌদ্ধ বিহারের তালিকা দেখতে এই লিঙ্কে যান - বৌদ্ধ মন্দিরের তালিকা
প্রবণতা
[সম্পাদনা]কিছু বৌদ্ধ বিহার বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিহারের তালিকায় রয়েছে। ১৯৫০-১৯৫১ সালে চীনা আক্রমণের আগে তিব্বতের ড্রেপুং মঠে প্রায় ১০ হাজার ভিক্ষু থাকত। ২০২০ পর্যন্ত ভারতে স্থানান্তরিত মঠটিতে প্রায় ৮ হাজার ভিক্ষু রয়েছেন।
খ্রিস্টধর্ম
[সম্পাদনা]প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, মিশরের সাধু অ্যান্থনি দ্য গ্রেটের হাত ধরেই খ্রিস্টান সন্ন্যাসবাদের সূচনা। প্রাথমিকভাবে, খ্রিস্টান সন্ন্যাসীরা নির্জনবাদী ছিলেন এবং অন্য সাধারণ মানুষদের সাথে সাক্ষাৎ খুব কমই হতো।
পরবর্তীতে, আমোনাস নামের একজন সন্ন্যাসী মঠবাদের একটি রূপান্তরকারী ধারা সৃষ্টি করেন, যেখানে 'একাকী' সন্ন্যাসীরা একে অপরের সাহচর্যে এবং রবিবারের প্রার্থনার জন্য একত্রিত হয়ে বাস করেন।
সিনোবিটিক মঠবাদ (cenobitic monasticism) উদ্ভাবন করেন সাধু পাচোমিয়াস দ্য গ্রেট। এই ধারায় সন্ন্যাসীরা একই ছাদের নিচে একত্রে বসবাস ও উপাসনায় মিলিত হন। কেউ কেউ অনুমান করেন যে, পাচোমিয়াস তার যৌবনে রোমান সেনাবাহিনীর ব্যারাকে যে ধরনের সাম্প্রদায়িক জীবনযাপন দেখেছিলেন, সেখান থেকেই তার এই ধারণার উৎপত্তি। এরপর খুব দ্রুত মিশরীয় মরুভূমি মঠে মঠে ভরে ওঠে, বিশেষ করে নাইট্রিয়া (ওয়াদি-এল-নাট্রুন) অঞ্চলের আশেপাশে। এই 'পবিত্র নগরীতে' একসাথে প্রায় ৫০,০০০ এরও বেশি সন্ন্যাসী বাস করত বলে ধারণা করা হয়। তবে, একাকী সন্ন্যাসবাদের রীতি কখনই বিলুপ্ত হয়নি। বরং, যারা গভীর ধ্যানের মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতার উচ্চস্তরে পৌঁছেছেন, কেবল তাদের জন্যই এই নির্জনবাস সংরক্ষিত ছিল।
এই মঠবাদের ধারণা ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং সে অনুযায়ী অন্যান্য অঞ্চলেও এর বিস্তার ঘটতে থাকে:
- আলেকজান্দ্রিয়ার আথানাসিয়াস সারডিকা-কাউন্সিল থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আধুনিক বুলগেরিয়ার চিরপানের কাছে প্রায় ৩৪৪ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপের প্রথম খ্রিস্টান মঠ প্রতিষ্ঠা করেন।
- মার আওগিন মেসোপটেমিয়ার নুসাইবিনের উপরে মাউন্ট ইজলায় একটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন (~৩৫০ খ্রিস্টাব্দ) এবং এই মঠ থেকে মেসোপটেমিয়া, পারস্য, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া এমনকি ভারত ও চীন পর্যন্ত সিনোবিটিক মঠবাদের ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়ে।
- বেথেলহামের কাছে মার সাবা জুডিয়ান মরুভূমির সন্ন্যাসীদের একটি মঠে সংগঠিত করেছিলেন (৪৮৩ খ্রিস্টাব্দ)। এটিকে পূর্ব অর্থোডক্স চার্চের সমস্ত মঠের আদি উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- নুরসিয়ার বেনেডিক্ট ইতালিতে মন্টে ক্যাসিনোর মঠটি প্রতিষ্ঠা করেন (৫২৯ খ্রিস্টাব্দ), যা রোমান ক্যাথলিক মঠবাসের এবং বিশেষ করে সেন্ট বেনেডিক্টের ধারার বীজ হিসাবে কাজ করে।
- একাদশ শতাব্দীতে কোলোনের ব্রুনো গ্র্যান্ডে চার্টরিউজে কার্থুসিয়ান মঠবাদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই ধারা থেকেই পরবর্তীতে সংগঠনটির নামকরণ করা হয়। এটি এখনও এই সন্ন্যাসী ধারার প্রধান কেন্দ্র।
- জেরোম এবং রোমের পাওলা বেথেলহামে একজন নির্জনবাদী সন্ন্যাসীর জীবনযাপন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখানে বেশ কয়েকটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। এই ধরনের জীবনযাত্রা স্পেন ও পর্তুগালে 'হায়ারোনিমাইটস' এর প্রতিষ্ঠাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। সেগোভিয়ার সান্তা মারিয়া দেল পারালের মঠটি এই ধারার প্রধান কেন্দ্র।
মঠ ও সাহিত্য
[সম্পাদনা]ম্যাথু লুইসের ১৭৯৬ সালের গথিক উপন্যাস 'দ্য মঙ্ক'-এ স্পেনের একটি কাল্পনিক মঠ এবং কনভেন্টের বর্ণনা রয়েছে, যে সময়ে সেখানে ধর্মীয় বিচার-ব্যবস্থা চালু ছিল। অনেকেই লুইসের উপন্যাসকে ক্যাথলিকবাদের সমালোচনা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। জেন অস্টেন তার ১৮১৮ সালের উপন্যাস 'নর্থাঙ্গার অ্যাবে'-র শেষার্ধে একটি পরিত্যক্ত মঠকে কেন্দ্র করে গল্প বুনেছেন। এটি ইংল্যান্ডে অষ্টম হেনরির মঠ বিলোপের ঘটনা এবং ফরাসি বিপ্লবের প্রভাবে ফ্রান্সে সেসময়কার মঠ বিলুপ্তিকে তুলে ধরে। মহিলাদের জন্য নির্মিত মঠ বা কনভেন্টগুলোকে প্রায়ই এমন নারীদের শাস্তির জায়গা হিসেবে চিত্রিত করা হতো যারা বিয়ে করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক ছিল।[৪]
১৮৮০ সালের উপন্যাস 'দ্য ব্রাদার্স কারামাজভ'-এ ফিওদর দস্তয়েভ্স্কি বাস্তব জীবনের অর্থডক্স মঠবাদ থেকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। উপন্যাসের কিছু অংশ বিশেষ করে অর্থডক্স মঠবাদে "প্রবীণ আধ্যাত্মিক গুরু"র প্রথার বিতর্ককে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। দস্তয়েভ্স্কির প্রবীণত্বের ধারণাটি মূলত ফাদার ক্লিমেন্ট জেডার-গোলম রচিত 'লাইফ অফ এল্ডার লিওনিড অফ অপটিনা' গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে তিনি 'দ্য ব্রাদার্স কারামাজভ'-এর বই ১-এর অধ্যায় ৫-এ সরাসরি উদ্ধৃতি দিয়েছেন।[৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Online Etymology Dictionary"।
- ↑ Peterson, Herman A. (২০১০)। "The Genesis of Monastic Libraries"। Libraries & the Cultural Record। 45 (3): 320–332। আইএসএসএন 1932-4855। এসটুসিআইডি 161518883। জেস্টোর 25750346। ডিওআই:10.1353/lac.2010.0001।
- ↑ Lall, Marie (২০২১), "The alternative: Monastic education", Myanmar’s Education Reforms, A pathway to social justice?, UCL Press, পৃষ্ঠা 101–129, আইএসবিএন 978-1-78735-387-9, সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-০৩
- ↑ Rogers, Katharine M. (১৯৮৫)। "Fantasy and Reality in Fictional Convents of the Eighteenth Century"। Comparative Literature Studies। 22 (3): 297–316। আইএসএসএন 0010-4132।
- ↑ Stanton, Leonard J.; Zedergol'm; Dostoevsky (১৯৯০)। "Zedergol'm's Life of Elder Leonid of Optina As a Source of Dostoevsky's The Brothers Karamazov"। The Russian Review। 49 (4): 443–455। আইএসএসএন 0036-0341। ডিওআই:10.2307/130525।